পড়া মনে রাখার কার্যকারী কৌশল

আসসালামু অলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী গন সবাই কেমন আছেন । আশা করি সবাই ভালো আছেন । অনেকেই প্রচুর পড়াশুনা করেন কিন্তু কমন সমস্যা হলো পড়া মনে থাকে না । যা পরেন তাই ভুলে যান । এই ধরণের সমস্যা যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য । আপনি ঠিক জায়গাতে এসেছেন । তবে আরেকটি কথা কম বেশি সবাই কিন্তু এই বিষয় টি নিয়ে হতাশায় ভুগে । এই কারনে সবাই পরা মনে রাখতে চায় এবং অনলাইনে এসে এই সমস্যা সমাধান করতে চায় । তাহলে আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক । 

বেশি বেশি পাঠ্য বই পড়া 

আগে আমাদের বুঝতে হবে কেন আমরা পড়া মনে রাখতে পারি না । বই যখন আপনি পড়েন তখন একটা বাক্য দুই থেকে তিন বার পড়েন মনে রাখার জন্য কিন্তু আমাদের ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি আমাদের ব্রেইন ধরে রাখতে পারে না । এর ফলে কিছু সময়ের মধ্যে আমরা অই বিষয় টি ভুলে যাই । কিন্তু আপনি যদি বার বার এবং বেশি করে একটি বিষয় পড়েন তাহলে এটি আপনার ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিনত হবে । এর ফলে আপনার মনে অনেক দিন ধরে থাকবে । এইটা পড়া মনে রাখার অন্যতম একটি কৌশল । 

ছবি একে পড়ার অভ্যাস করা 

যেকোনো লেখার চেয়ে ছবি আমাদের ব্রেইন এ বেশি সময় থাকে । যদি আমরা লেখার পাশাপাশি ছবি এর মাধ্যমে পড়তে পারি তাহলে পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । আপনি যত বেশি ছবি আঁকবেন আপনার ব্রেইন তত বেশি উদ্দীপিত হবে এর ফলে পড়তে বসলে পড়া মনে থাকবে । তাই সবসময় চেষ্টা করবেন ছবি একে একে পড়ার অভ্যাস তৈরি করা । 

পড়া মনে রাখার জন্য Concept Tree ব্যবহার করা

কনসেপ্ট মানে হলো ধারনা এবং ট্রি মানে গাছ । এর অর্থ হলো যেকোনো অধ্যায় পড়া শুরু করার আগে ওই অধ্যায় কোন টপিকের উপর দেওয়া হয়েছে এর একটি ধারনা নেওয়া এবং কি কি সাব টপিক রয়েছে এই গুলো গাছের পাতার সাথে মনে করা । এই পদ্ধতিতে কনসেপ্ট ট্রি বলা হয় এবং এটি পড়া মনে রাখার একটি অন্যতম কৌশল । 

সঠিক সময়ে পড়তে বসা 

সঠিক সময়ে পড়তে বসা পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ । অনেকেই মনে করেন সারাদিন কিংবা সারারাত পরলে ভালো হয় । আসলে এইটা একটা ভুল ধারণা । আমাদের ব্রেইন সবসময় একইরকম ভাবে এক্টিভ থাকে না । গবেষণাতে দেখা গেছে বিকেল এর পর আমাদের ব্রেইন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেতে থাকে । এই জন্য পড়া মনে রাখার জন্য সন্ধ্যা বা রাত গুরুত্বপূর্ণ সময় । একই ভাবে ভোর বেলাতে ব্রেইন খুব ফ্রেশ থাকে । আপনি সারাদিন পড়ে যেটুকু পড়া মুখস্ত করতে পারবেন । ভোরবেলা ১ ঘণ্টা পরলেই আপনি এর চেয়ে বেশি পড়া মনে রাখতে পারবেন । 

ছন্দ আকারে পড়া মনে রাখা 

আমাদের ব্রেইন এলোমেলো জিনিস স্মৃতিতে রাখতে পারে না । আপনি যদি টেবিল আকারে সাজিয়ে অথবা ছন্দ বানিয়ে যেকোনো পড়া পড়েন তাহলে মনে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । 

সঠিক সময়ে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো 

গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের ঘুমের সময় ব্রেইন খুব শান্ত থাকে এর ফলে আপনি যদি পড়ে ঘুমান তাহলে এইটা ব্রেইন এ স্মৃতি হিসাবে থেকে যায় । তাই পড়া মনে রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো জরুরী । একজন শিক্ষার্থী এর প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত । এর থেকে কম ঘুম হলে পড়া মনে রাখার ক্ষমতা ও কমে যায় । 

পড়তে বসার আগে কিছু সময় হাটা 

পড়তে বসার আগে ১০ মিনিট হাটা বা কিছু সময় হালকা ব্যায়াম করে নেওয়া । এর ফলে আপনার মস্তিষ্কের ধারন ক্ষমতা বেড়ে যায় । এতে পড়া মনে রাখতে সুবিধা হয় । এক গবেষণায় দেখা গেছে পড়ার আগে ৫ থেকে ১০ মিনিট হাটলে মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা ১০ শতাংশ বেড়ে যায় । তাহলে আজ থেকেই আপনি পড়া মনে রাখার কৌশল হিসাবে প্রতিদিন পড়তে বসার আগে ১০ মিনিট হাটতে পারেন । 

পড়ার প্রতি আকর্ষণ থাকা 

আপনি যে বিষয় টি পড়তে চান সেই বিষয়টির উপর আকর্ষণ তৈরি করতে হবে । যেমন ধরুন আপনি টিভিতে একটি নাটক অথবা সিনেমা একবার দেখলেই হুবহু বলে দিতে পারবেন যে কি কি হয়েছিল । কিন্তু পড়ার সময় মনে থাকে না । আমরা যখন টিভি দেখি তখন প্রচন্ড আকর্ষণ নিয়ে দেখি এই কারনে মনে থাকে । পড়ার ক্ষেত্রেই আকর্ষণ তৈরি করতে হবে । 

মারকিং করে পড়া মনে রাখা 

আপনার যে বিষয় টি মনে থাকে না বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো কালার মারকার দিয়ে হাইলাইট করে রাখতে পারেন । এর ফলে যখন পড়তে জাবেন আলাদা ভাবে আপনার সামনে দেখা যাবে ওই টপিক গুলো । এর ফলে মনে ও থাকবে । 

যা পড়বেন এই বিষয় গুলো অন্যকে শেখানোর চেষ্টা করবেন 

এই বিষয় টি ও পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর । আপনি যা যা পড়ছেন এই বিষয় গুলো নিয়ে পরে আলোচনা করা বা কাউকে শেখানো এর ফলে আপনার রিভিশন হয়ে যাবে এবং মনেও থাকবে । তাই পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে এই কৌশল ব্যবহার করতে পারেন । 

নিজে নিজেই পরিক্ষা নেওয়া 

আপনি জদি বার বার আপনার নিজের পরিক্ষা নিজেই নেন তাহলে পড়া গুলোও বার বার হয়ে যাবে । এর ফলে পড়া ভুলবেন না মনে থাকবে অনেক সময় ধরে । 

পড়ার সময় গ্রীন ট্রি 

আপনি যখন পড়তে বসবেন অথবা পড়ার মাঝখানে এক কাপ গ্রীন ট্রি খেতে পারেন । এর ফলে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে । 

শেষ কথা 

পড়া মনে রাখার কৌশল গুলো আশা করি বুঝতে পেরেছেন । আসলে আপনাকে পড়া মনে রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণ পড়তে হবে । এইটাই হলো শেষ কথা । যতক্ষণ আপনার মনে না থাকে । পড়ার কোন বিকল্প নেই । আমরা বেশিরভাগ সময় একটা বিষয়ে না বুঝলে একবার পরেই রেখে দেই এর ফলে ওই বিষয় টি আর পড়তে ভালো লাগে না । এই ভাবে ধীরে ধীরে ব্রেইন ও অলস হয়ে যায় । তাই সবসময় বেশি বেশি পড়ুন এবং যেকোনো বিষয় খুব ভালো ভাবে বুঝে পড়ুন তাহলেই আশা করি আপনার ও পড়া মনে থাকবে ।